মহানবী সা. ই হচ্ছেন একমাত্র অনুকরণীয় আদর্শ ও মানদন্ড।
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”
লাক্বাদ কানা লাকুম ফি রাসুলিল্লাহি উসয়াতুন হাসানাহ।
যুগে যুগে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা নবী রাসুলগনের মাধ্যমে তাঁর বান্দার কাছে বানী পাঠিয়েছেন। সমস্ত বিধি-বিধান, আদেশ-নিষেধ, মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে তাঁর বান্দাহদের অবহিতকরনের জন্য দু ধরনের বান্দা তৈরী করেছেন।
প্রথমত, এমন প্রকার বান্দা যারা আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এবং নিস্পাপ তথা পাপ যাদের স্পর্শ করতে পারেনা। যাদের মানবিক হিংসা-ভ্রান্তি, লালসা, ও জাগতিক চাহিদা কাবু করতে পারেনা। শয়তানও যাদের ধারে কাছে ভিড়তে পারেনা।এমন প্রকার ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তায়ালা আসমানী ওহীর মাধ্যমে সকল বিষয়ের ফয়সালাকারী ও নির্ধারনকারী হিসেবে মনোনীত করেছেন। এক কথায়, আল্লাহ এবং তাঁর গুনাহপ্রবন, ভুল-ভ্রান্তি সম্পন্ন, মানবিক দুর্বলতা সম্পন্ন, এবং জাগতিক লোভে পতিত হওয়ার আশংকাসম্পন্ন বান্দাদের মাঝে সেতুবন্ধন হচ্ছেন এই মনোনীত বান্দাগন।
এ বান্দাদের তালিকায় কে আছেন
নবীগন, রাসুলগন, উজীর তথা ওয়াসী বা ভারপ্রাপ্তগন (যেমন মূসা আঃ এর অবর্তমানে হারুন আঃ)।
ইমামগন (হযরত ইবরাহীম আঃ প্রথমত নবুয়ত লাভের মাধ্যমে নবীর সম্মান লাভ করেন, তারপর পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার মধ্য দিয়ে খলীল উপাধি লাভ করেন, অতঃপর একনিষ্ঠতার কারনে ও ব্যক্তিত্তের কারনে তিনি উম্মাতের ইমাম হওয়ার উপাধি লাভ করেন।
আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম নবী, রাসুল, ইমামুন নাবিয়্যিন, হাবিব এবং খাতামুন নাবিয়্যিন সবগুলোই ছিলেন। যা হোক, আল্লাহর নির্দেশনাবলী কেবল এ সকল মনোনীত বান্দাদের মাধ্যমেই অমনোনীত ও সাধারন বান্দাদের প্রতি জারি করা হয়ে থাকে। যেহেতু, নবী রাসুল গন মাসুম এবং তাঁরা ওহী দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকেন তাই তাঁরাই হতে পারেন আল্লাহর নির্দেশনাবলীর এবং মারেফাতের নমুনা, মানদন্ড ও বিকাশস্থল। এবং এই মানদন্ড দেখে দেখে, অনুকরন করে, তাঁদের সরনাপন্ন হয়ে উম্মাতগন নিজেদের জীবন পরিচালনা করবে।
দ্বিতীয় প্রকার বান্দা তথা সাধারন অমনোনীত বান্দাগন হচ্ছেন উম্মাতগন যার মধ্যে রয়েছে সাহাবাগন, পূর্ববর্তীনবীগনের জন্য তাঁদের হাওয়ারীউনগন, ওলী, গাওস, কুতুব, শায়েখ, পীরসহ সকল উম্মাতগন।এই প্রকার বান্দাদের বিধি-বিধানের মৌলিক বিষয়ে (নবী কর্তৃক ফয়সালাকৃত বিষয়সমূহ) ইজতিহাদ করার কোন অধিকার রাখেনা এবং নবীর জীবদ্দশায় কিংবা ওফাত পরবর্তীসময়ে ফয়সালাকৃত মৌলিক বিষয়ে ইজতিহাদ, ইজমা, বা কিয়াসের ভিত্তিতে কোন প্রকার পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারেনা। এই প্রকার বান্দাদের কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর মনোনীত রাসুলগন যা নির্দেশ করবেন তা অক্ষরে অক্ষরে মান্য করা এবং কোন ওজর, অভিযোগ, বেয়াদবী, ও সন্দেহ পোষণ করা ব্যতিত ইমান বিল ইয়াক্বীনের সাথে মৃত্যুবরণ করা।
উপরোক্ত শর্তাবলী মেনে নিয়ে যারা মহানবী সা. কে দেখেছেন এবং তাঁর কথা বিনা ওজরে, বিনা অভিযোগে, বিনা দ্বিধায়, এবং বিনা ইজতিহাদে মৃত্যু পর্যন্ত ইমানের প্রতি অটল থেকেছেন তাঁরা হচ্ছেন মহামান্নিত আসহাবে রাসুলগন।
এরপর যারা এসব শর্ত মেনে এ পর্যন্ত ইমানের সাথে মৃত্যবরন করে আসছেন তাঁরা তাদের ইমান, কুরবাত এবং মারেফাত ভেদে কেউ তাবেয়ী, কেউ ওলী, কেউ গাওস, কেউ কুতুব, কেউ ফকীহ, কেউ মুহাদ্দিস আর কেউ আমাদের মত সাধারন মুসলমান।
যে বিষয়ে কোরঅান ও মহানবী (সাঃ) এর স্পষ্টত কোন বক্তব্য নেই সেই বিষয়ে কুরআন এবং আহলে বাইতের মুলনীতি মেনে ইজতিহাদ করা কর্তব্য। যেহেতু আহলে বাইত হচ্ছেন মহানবী সা. এর পবিত্র বংশধর যাদের আল্লাহ তায়ালা আয়াতে তাতহীরের অবতীর্ণকরনের মাধ্যমে তাহারাত ঘোষনা করেছেন। এবং যাদের আঁকড়ে ধরতে মহানবী সা. আদেশ করে গিয়েছেন। মহানবী সা. এর যে কোন আদেশ-নিষেধ সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য, সাহাবীগনও এ আদেশ পালনের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত নন। অতএব, মহানবী সা. যখন নির্দেশ করলেন আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরার কথা তখন বিনা বাক্য ব্যয়ে তা পালন করাই হচ্ছে সাহাবাদের কর্তব্য এবং সেই আদর্শে আদর্শিত হওয়া সাহাবাগন হচ্ছেন আমাদের জন্য প্রেরনামূলক। যারা আমাদের প্রমান করে দেন যে আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরে আশরাফুল মাখলুকাত হওয়া সম্ভব। আর যদি তা না করা হয় তবে মানুষ আসফালা সাফিলীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
ভালো করে বুঝা প্রয়োজন যে মহানবী সা. এর প্রতি মান্যতার ভিত্তিতে সাহাবাখ্যাতি লাভ এবং মর্যাদার অধিকার লাভ হয়। এবং মহানবী সা. এর আদেশ-নিষেধকে বিণা সংকোচে না মানলে সে যত বড় নাম ওয়ালা ব্যক্তিই হোন না কেন তাকে মান্য করার অর্থ হচ্ছে মহানবী সা. ব্যতীত অন্য কাওকে শরীয়তের বিধানদাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। যদি মহানবী সা. এবং তাঁর মনোনীত ্ ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত অন্য কেউ নিজস্ব ইজহিহাদের উপর ভিত্তি করে ইসলামের মৌলিকতাকে আক্রমন করে তবে এটা বনী ইসরাইলের সেই সব লোকদের মত হবে যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বানীর ধারক নবীগনের পর নিজস্ব ইজতিহাদ দিয়ে মৌলিকতায় বিকৃতী সাধন ঘটিয়েছিলো।অতএব মহানবী সা. হচ্ছেন একমাত্র মানদন্ড এবং মহানবী সা. এর পরে তাঁর মনোনীত ব্যক্তিবর্গই হচ্ছেন একমাত্র অনুকরনযোগ্য যারা মহানবী সা. এর প্রকৃত শিক্ষার জলজ্যন্ত উদাহরন ছিলেন।
আয়াতে তাতহীরে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিলেন যে আহলে বাইতগন পবিত্র। অর্থাৎ আদর্শ হিসেবে মনোনীত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন। এরপর স্বয়ং নবী করিম সা. এর মাধ্যমে সকল সাহাবা সহ সমস্ত উম্মাতের প্রতি নির্দেশ দিয়ে দিলেন আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরার জন্য এবং এটা বিপথে যাওয়া হতে রক্ষা করবে। মহানবী সা. এর পর তাঁর আদর্শের জলজ্যন্ত প্রতীক আহলে বাইতের ইমাম গন হচ্ছেন এ উম্মাত তথা সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সকল উম্মাতের দিশারী যারা উম্মাতকে প্রকৃত আদর্শের মানদন্ড তথা নবী করিম সা. এর আদর্শের দিকে পরিচালিত করেন। অতএব এ সত্য যারা মেনে নেন তারাই আশরাফুল মাখলুকাত আর যারা জ্ঞানত মেনে নেননি তারাই অমান্যকারীদের অন্তর্ভূক্ত। আর নবী করিম সা. এর আদেশ অমান্যকারীগন আমাদের মত সাধারন গোনাহপ্রবন মানুষ হলেও মানদন্ড তথা অনুকরণীয় হতে পারেননা।
পরিশেষে এটাই সত্য যে মহানবী সা. ই হচ্ছেন একমাত্র আদর্শের মাপকাঠি এবং তাঁর একমাত্র প্রকাশস্থল হচ্ছেন আহলে বাইতগন। তাঁরা আমাদেরকে সুন্নতে নবী সা. এর প্রকৃত পথে পরিচালিত করেন নবীজির অবর্তমানে। তাঁদের থেকেই ইসলামের প্রকৃত ঝর্ণাধারা প্রবাহীত। এবং তাঁরাই হচ্ছেন নূহ আ. এর নৌকাতূল্য যেখানে উম্মাতের অবশ্যই আরোহন করতেই হবে যদি দুনিয়া এবং আখিরাতে মুক্তি লাভ করতে চায়।
Comments
Post a Comment