হযরত ফাতেমা (সা.আ.) এর ফজিলত ও মর্যাদা
যে সমস্ত বিস্ময়কর বস্তু হযরত ফাতেমার আলোকজ্জ্বল জীবনকে আরো অধিক মর্যদার করে তোলে তা হচ্ছে তাঁর প্রতি মহানবীর অত্যধিক স্নেহ ও ভালবাসা। এই ভালবাসা ও স্নেহ এতই অধিক ও প্রচণ্ড আকারে ছিল যে এটাকে রাসূলে আকরামের জীবনের অন্যতম বিষয় বলে গণ্য। যদি আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগের সাথে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তবে দেখবো যে,যেহেতু ইসলামের সুমহান নবী (সা.) মহান আল্লাহর নিকট তাঁর বান্দাদের মাঝে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও নৈকট্য লাভের অধিকারী এবং সকল বিষয়ে ন্যায় ও সত্যের মাপকাঠি ছিলেন সেহেতু নবীর সুন্নাত অর্থাৎ তাঁর কথা ও কাজ এমনকি তাঁর নীরবতাও দীন ও শরীয়তের সনদ হিসেবে পরিগণিত যা সমানভাবে আল্লাহর কিতাবের পাশাপাশি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত উম্মতের প্রতিটি ব্যক্তির কাজে-কর্মে আদর্শ হিসেবে গণ্য। কোরআনুল কারিমের স্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে :
وَ مَا يَنْطِقُ عَنِ اْلْهَوَى إِنْ هُوَ إِلاَّ وَحْىٌ يُوْحَى
অর্থাৎ কোন কিছুই তিনি আপন প্রবৃত্তির তাড়নায় বলেন না,তার প্রতিটি কথাই ওহী বলে গণ্য যা তার প্রতি অবতীর্ণ হয়।”১
এ সমস্ত বিষয় বিশ্লেষণ করলে হযরত ফাতেমার আধ্যাত্মিক মাকাম ও সুমহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারি এবং এই ব্যাপারে নিঃসন্দেহে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি,যে নিষ্পাপ ইমামগণ সত্যই বলেছেন : “ফাতেমা পবিত্র এবং স্বর্গীয় ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য।”
হযরত ফাতেমা ছাড়া মহানবী (সা.)-এর আরো কন্যা সন্তান ছিল। যদিও তিনি তাঁর পরিবার,আত্মীয়-স্বজন,সন্তানগণ এমনকি প্রতিবেশী ও অন্যদের প্রতিও দয়াপরবশ ছিলেন তবুও হযরত ফাতেমার প্রতি তাঁর বিশেষ ভালবাসা স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে,তিনি বিভিন্ন সময়ে সুযোগমত এ ভালবাসার কথাটা সরাসরি ঘোষণা করেছেন এবং সাহাবাদের সামনে এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন।
আর উপরোক্ত বিষয়টি এ ব্যাপারে দলীল যে,হযরত ফাতেমা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জীবন ইসলামের ভাগ্যের সাথে সংযুক্ত। নবী (সা.)-এর সাথে হযরত ফাতেমার সম্পর্ক শুধুমাত্র একজন পিতার সাথে কন্যার সম্পর্কের ন্যায় ছিল না বরং তা একটি সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যত এবং মুসলমানদের ইমামত ও নেতৃত্ব সম্বন্ধে খোদায়ী নির্দেশাবলীর সাথে পরিপূর্ণ সম্পর্কিত ।
এখন আমরা হযরত ফাতেমার প্রতি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অসীম মহব্বত ও ভালবাসার কিছু নমুনার সাথে পরিচয় হবো এবং সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবো :
لآ تَجْعَلُوْاْ دُعَاءَ اْلْرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا
অর্থাৎ রাসূলকে (আহবান করার সময়) তোমরা তোমাদের মধ্যে পরস্পরকে যেভাবে আহবান কর সেভাবে আহবান করো না (তাকে ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্’ বলে আহবান করবে)।৪
এ আয়াতটি নাযিল হয় তখন আমি ভীত সন্ত্রস্থ হলাম যে কখনো যেন আমি ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্’ এর স্থানে ‘হে পিতা’ বলে আহবান না করে বসি। অতএব,তখন থেকে আমি আমার পিতাকে ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্’ বলে সম্বোধন করা শুরু করলাম। প্রথম দুই অথবা তিনবার এরূপ আহবান শ্রবণ করার পর নবী (সা.) আমাকে কিছু না বললেও এরপর আমার দিকে ফিরে বললেন : “হে ফাতেমা! উক্ত আয়াতটি তোমার উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয় নি। আর তোমার পরিবার ও বংশের জন্যেও অবতীর্ণ হয় নি। তুমি আমা থেকে আর আমিও তোমা থেকে। এ আয়াতটি কোরাইশ গোত্রের মন্দ ও অনধিকার চর্চাকারী লোকদের জন্যে অবতীর্ণ হয়েছে যারা বিদ্রোহী ও অহংকারী। তুমি পূর্বের ন্যায় আমাকে ‘হে পিতা’ বলে আহবান করো। তোমার এরূপ আহবান আমার হৃদয়কে পূর্বের চেয়ে অধিক জীবন্ত এবং মহান আল্লাহকে অধিক সন্তুষ্ট করে।”৫
এ আয়াতটি নাযিল হয় তখন আমি ভীত সন্ত্রস্থ হলাম যে কখনো যেন আমি ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্’ এর স্থানে ‘হে পিতা’ বলে আহবান না করে বসি। অতএব,তখন থেকে আমি আমার পিতাকে ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্’ বলে সম্বোধন করা শুরু করলাম। প্রথম দুই অথবা তিনবার এরূপ আহবান শ্রবণ করার পর নবী (সা.) আমাকে কিছু না বললেও এরপর আমার দিকে ফিরে বললেন : “হে ফাতেমা! উক্ত আয়াতটি তোমার উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয় নি। আর তোমার পরিবার ও বংশের জন্যেও অবতীর্ণ হয় নি। তুমি আমা থেকে আর আমিও তোমা থেকে। এ আয়াতটি কোরাইশ গোত্রের মন্দ ও অনধিকার চর্চাকারী লোকদের জন্যে অবতীর্ণ হয়েছে যারা বিদ্রোহী ও অহংকারী। তুমি পূর্বের ন্যায় আমাকে ‘হে পিতা’ বলে আহবান করো। তোমার এরূপ আহবান আমার হৃদয়কে পূর্বের চেয়ে অধিক জীবন্ত এবং মহান আল্লাহকে অধিক সন্তুষ্ট করে।”৫
ইমাম বুখারীও এরূপ একটি হাদীস হযরত মাসুর ইবনে মুখরিমাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ আনসারী থেকে এরূপ বর্ণিত আছে যে রাসূল (সা.) বলেছেন : “যে ফাতেমাকে কষ্ট দেয় সে যেন আমাকে কষ্ট দেয় আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করলো।
‘সহীহ মুসলিম’ ও হাফেজ আবু নাঈম রচিত হিলইয়াতুল আউলিয়া’ গ্রন্থদ্বয় ছাড়াও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মনীষীদের রচিত অনেক গ্রন্থে অনুরূপ বর্ণনার হাদীস বর্ণিত আছে।৮
‘সহীহ মুসলিম’ ও হাফেজ আবু নাঈম রচিত হিলইয়াতুল আউলিয়া’ গ্রন্থদ্বয় ছাড়াও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মনীষীদের রচিত অনেক গ্রন্থে অনুরূপ বর্ণনার হাদীস বর্ণিত আছে।৮
Comments
Post a Comment